Islam

তাহাজ্জুদ নামাজ সফলতার অন্যতম মাধ্যম

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা আল্লাহর ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬) কিয়ামুল লাইল- রাত জেগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায, মুমিনের মর্যাদার সিঁড়ি। জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম উপায়। সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহর একান্ত ও প্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাহাজ্জুদ ছাড়েননি। ছুটে গেলে কাযা করতেন। নিজে আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উৎসাহিত করতেন। মুমিনের মর্যাদা- জিবরীল আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে নবীজির খেদমতে আসতেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মাঝে ওহীর জ্ঞান ও ঊর্ধ্বজগতের খবর পৌঁছানোর গুরুদায়িত্বটা ন্যস্ত ছিল তাঁর কাঁধে। নবীজীর কাছে আসতেন এবং কিছু উপদেশ ও নসীহত শুনিয়ে আবার সরে যেতেন মানবপরিবেশ থেকে। একদিন উপদেশ শোনানোর পর তিনি নবীজীকে একটি অসাধারণ দর্শন জানালেন- হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল- রাতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় ও বিভিন্ন বন্দেগীর মধ্যে, আর তাঁর সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে। (মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৯২১; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪২৭৮) ফরয নামাযের পরেই যার স্থান পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুমিনের পরিচয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর পরই যে নামায আল্লাহর কাছে প্রিয় তা হল তাহাজ্জুদ। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীস; নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ، وَأَفْضَلُ الصّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلاَةُ اللّيْلِ. রমযানের পর রোযা রাখার উত্তম সময় মুহাররম মাস আর ফরয নামাযের পর উত্তম নামায রাতের নামায, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭২৫ তাহাজ্জুদ গোনাহ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللّيْلِ فَإِنّهُ دَأَبُ الصّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ. তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী। -জামে তিরমিযি, হাদীস ৩৫৪৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১১৫৬ শুধু নামাজ আদায় নয়, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা খাঁটি ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭) আমরা চেষ্টা করব তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে। একান্ত ওজর ছাড়া তাহাজ্জুদ ছাড়ব না। নবীজী নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যেকোনো আমল নিয়মিত আদায় করা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। হাদীসে এসেছে- أَحَبّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلّ. আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪২ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.- কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিয়ে বলছেন- يَا عَبْدَ اللهِ، لاَ تَكُنْ بِمِثْلِ فُلاَنٍ كَانَ يَقُومُ اللّيْلَ فَتَرَكَ قِيَامَ اللّيْلِ. হে আব্দুল্লাহ! অমুকের মতো হয়ো না। সে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করত; কিন্তু পরবর্তীতে আবার ছেড়ে দিল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭০৩ তাই আসুন, তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হই। নিজে অভ্যস্ত হই। অন্যকেও উৎসাহিত করি এবং সহযোগিতা করি। দুই-চার রাকাত তাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে রোনাযারি, কান্নাকাটি করি, ইসতিগফার করি। তাঁর নৈকট্য ও মাগফিরাত লাভে ধন্য হই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ (সা.)-এর দৈহিক সৌন্দর্য ও গুণাবলী

হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব। তাঁর গুণাবলীতে আলোকিত বিশ্ব। এসব গুণাবলীর মধ্যে তাঁর দৈহিক ও চারিত্রিক গুণাবলীগুলো বিদ্যমান। তা থেকে কিছু তুলে ধরা হলো- ১. চেহাড়া সৌন্দর্য হজরত বারাআ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা ছিল মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের (চরিত্রের) অধিকারী। তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) হজরত আবু ইসহাক তাবিঈ রাহমাতুল্লাহি আলঅইহি বর্ণনা করেছেন, হজরত বারাআকে জিজ্ঞাসা করা হলো- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা মোবারক কি তলোয়ারের মত ছিল? তিনি বললেন না, বরং চাঁদের ন্যায় ছিল।’ (বুখারি) ২. দৈহিক সৌন্দর্য হজরত বারাআ ইবনে আজিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝারি গড়নের ছিলেন। তাঁর উভয়ে কাঁধের মধ্যস্থল প্রশস্ত ছিল। তাঁর মাথার চুল দুই কানের লতি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আমি তাঁকে লাল ডোরাকাটা জোড় চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চেয়ে বেশি সুন্দর আমি কখনো কাউকে দেখিনি। হজরত ইউসুফ ইবনু আবু ইসহাক তাঁর বাবা থেকে হাদিস বর্ণনায় বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথার চুল কাঁধ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।’ (বুখারি) ৩. বিশ্বনবির দেহের গঠন হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আহু বর্ণনা করেন, আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতের তালুর চেয়ে মোলায়েম কোনো নরম ও গরদকেও স্পর্শ করিনি। আর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরীরের সুঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক সুঘ্রাণ আমি কখনো পাইনি।’ (বুখারি ও মুসলিম) ৪. লজ্জাশীলতা হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গৃহবাসিনী পর্দানশীন কুমারীদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো কিছু অপছন্দ করতেন তখন তা তাঁর চেহারায় বুঝা যেত।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ) ৫. রুচিশীলতা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কোন খাদ্যকে মন্দ বলতেন না। রুচি হলে তিনি খেতেন; আর রুটি না হলে বাদ দিতেন (খাওয়া থেকে বিরত থাকতেন)।’ (বুখারি, মুসলিম) ৬. কথা বলার ধরন হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে কথা বলতেন যে, কোন গণনাকারী গুণতে চাইলে তাঁর কথাগুলো গণনা করতে পারতেন।’ (বুখারি) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও বর্ণনা করেছেন, তুমি অমুকের অবস্থা দেখে কি অবাক হও না? তিনি এসে আমার হুজরার পাশে বসে আমাকে শুনিয়ে হাদিস বর্ণনা করেন। আমি তখন নামাজে ছিলাম। আমার নামাজ শেষ হবার আগেই তিনি উঠে চলে যান। যদি আমি তাকে পেতাম তবে আমি অবশ্যই তাকে সতর্ক করে দিতাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের মত দ্রুততার সঙ্গে কথা বলতেন না।‘ (বুখারি, মুসলিম) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।